জনসংখ্যা বিশ্লেষণ ক্রমহ্রাসমান হিন্দু অনুপাত

প্রধান শহরগুলিতে হিন্দুরা প্রচুর মাত্রায় প্রবেশ করলেও সেখানকার হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত কমেই যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে প্রধান শহরগুলিতেও, বিশেষত যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘূ জনসংখ্যা ছিল, হিন্দুরা ধীরে ধীরে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে।

The article was translated to Bangla by Prasun Maitra.

প্রাককথন

আমরা আমাদের আগের বেশ কয়েকটি প্রবন্ধে ভারতের জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই পর্যায়ে আমরা উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখন্ড (১), পশ্চিমবঙ্গ (২), আসাম (৩), কেরালা (৪), জম্মু ও কাশ্মীর (৫), হিন্দি বলয়ের বিক্ষিপ্ত এলাকা (৬) এবং মধ্য ভারতের আদিবাসীবহুল এলাকায় (৭) ক্রমহ্রাসমান হিন্দু জনসংখ্যা নিয়ে আলোচনা করবো। গত আগস্ট মাসে, প্রফেসর শাশ্বতী সরকারের দেয়া ভাষণের উপর ভিত্তি করে আমরা জনসংখ্যার পরিবর্তনের সাথে সাথে অন্যান্য পরিবর্তন এবং তার ফলাফল, সম্ভাব্য কারণ, সমাধান এবং সমাধানের অযোগ্য (৮) বিষয় নিয়েও আলোচনা করবো। এই লেখায়, ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে নিউ ইয়র্কে প্রফেসর শাশ্বতী সরকারের ভাষণের উপর ভিত্তি করে, আমরা ভারতের জনসংখ্যার বয়স ভিত্তিক সাম্প্রদায়িক চরিত্র নিয়েও আলোচনা করবো। এই প্রবন্ধে আমরা মূলত পর্যালোচনা করবো যে কিভাবে হিন্দু জনসংখ্যার (যাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিস্থাপন ভারতীয় উপমহাদেশে হয়েছে। যেমন হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এবং বিবিধ আদিবাসী সমাজ) তরুণ প্রজন্ম ভারতের বিভিন্ন স্থানে হ্রাস পাচ্ছে এবং তার সাথে আমরা নতুন প্রজন্মের (০-৪ বছর) সাথে পুরনো প্রজন্মের (৬৫-৬৯ বছর) তুলনামূলক আলোচনাও করবো। আমরা সেই এলাকাগুলিকে পরীক্ষা করবো যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বড় শহরগুলির, যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে, তরুণ জনসংখ্যার সাম্প্রদায়িক চরিত্রের প্রতিও আমরা নজর দেবো। জনসংখ্যায় তরুণ ও প্রবীনদের সংখ্যার অনুপাত আগামীদিনে জনসংখ্যার গতিপথ নির্ধারণ করে দেবে। আমরা বিশেষক্ষেত্রগুলি এবং তার সাথে নতুন প্রজন্মের হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ নিয়েও আলোচনা করবো। সবশেষে আমরা ভারতের গ্রাম ও শহরের তুলনামূলক আলোচনা করবো যাতে দূর্বল জায়গাগুলি এবং পরিবর্তনের চরিত্র সম্পর্কে অবহিত হতে পারি।

পূর্বস্থিতি

১৮৭২ (প্রথম জনসংখ্যা নির্ণয়ের সময়) থেকে ২০১১ (সর্বশেষ জনসংখ্যা নির্ণয়) সালের মধ্যে অবিভক্ত ভারতে হিন্দু জনসংখ্যা ৭৯% থেকে কমে ৬৬% হয়েছে (৮)। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল যে ১৮৭২ থেকে প্রতি দশকেই হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পেয়ে আসছে। নীচের গ্রাফগুলিতে ১৮৮১ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত জনসংখ্যার দশক অনুযায়ী পার্থক্য দেখা যাবে। দেশভাগ হয়েছিল যখন মোট জনসংখ্যার ৭৩% হিন্দু জনসংখ্যা ছিল। একই সময়ে, অর্থ্যাত ১৮৮১ থেকে ১৯৪১ সালের মধ্যে, মুসলিম ও খ্রীস্টান জনসংখ্যা যথাক্রমে ১৯.৯% থেকে ২৪.৩% এবং ০.৭% থেকে ১.৮% হয়েছে। ১৮৭২ সালে কেবল উত্তর পূর্ব সীমান্ত রাজ্য, জম্মু ও কাশ্মীর, বালুচিস্তান এবং সিন্ধ এলাকায় হিন্দু জনসংখ্যা সংখ্যালঘু ছিল। বাংলা ও পাঞ্জাবে হিন্দু জনসংখ্যাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। Religions Demographics of India – Age Based 01

সাথে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে ইসলাম ও খ্রীস্টান জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাস মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলনা। দেশভাগের পরে, পশ্চিম পাকিস্তান প্রায় হিন্দু শূণ্য হয়ে যায় আর পূর্ব পাকিস্তানেও হিন্দু সংখ্যা প্রভূত কমে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানে হিন্দু জনসংখ্যা, ১৯৪১ সালে যা ১৯.৭% ছিল, সেটা ২% হয়ে যায় ২০১১ সালে (পাকিস্তানে শেষ জনগণনা হয়েছিল ১৯৯৮ সালে আর এই সংখ্যা সেই গণণার উপর ভিত্তি করেই পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালে নতুন জনগণণার নির্দেশ জারী করা হয়েছে তবে তার সম্পূর্ণ হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি)। পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) হিন্দু জনসংখ্যা ১৯৪১ সালের ২৯৫ থেকে কমে ২০১১ সালে ৮.৯% হয়েছে (৮)। ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে হিন্দু জনসংখ্যার অনুপাত ১৯৫১ সালের ৮৭.২ থেকে কমে ২০১১ সালে ৮৩.২% হয়েছে। ফলতঃ, এই প্রবন্ধে আমরা উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো যে ভারতের কোথায় হিন্দু জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই হ্রাস পেয়েছে এবং কোথায় পেতে চলেছে, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। আমরা, প্রথমত, দেশজুড়ে জনসংখ্যার হ্রাস এবং তার বিপদ নিয়ে আলোচনা করবো।

আমরা সেইসব এলাকার, গ্রাম ও শহর আলাদাভাবে, বয়স অনুযায়ী জনসংখ্যা নিয়েও আলোচনা করবো। এছাড়াও আমরা উল্লেখযোগ্য বড় শহরগুলির জনসংখ্যার পরিবর্তন নিয়েও আলোচনা করবো।

চিহ্নিতকরণ

আমাদের এই লেখায় আমরা মানচিত্রে দেয়া বিভিন্ন রঙ দিয়ে নিম্নলিখিত তথ্যগুলি বুঝাতে চেয়েছি। মানচিত্রে পরিপুর্ণ হিন্দু জনসংখ্যা বুঝাতে আমরা ব্যবহার করেছি –

১.  ৬০%+ হিন্দু – সাদা

২.  ৫০-৬০% হিন্দু – হালকা সবুজ

৩.  ২০-৫০% হিন্দু – গাঢ় সবুজ

৪.  <২০% হিন্দু – লাল

মানচিত্রে প্রবীন (৬৫-৬৯) এবং নবীন (০-৪) বয়সের জনসংখ্যার পার্থক্য বুঝাতে নিম্নলিখিত রঙ ব্যবহার করেছি –

১.  হিন্দুদের সদর্থক পরিবর্তন – গেরুয়া

২.  ০-৫% হিন্দু হ্রাস – সাদা

৩.  ৫-১০% হিন্দু হ্রাস – হালকা সবুজ

৪.  ১০-১৫% হিন্দু হ্রাস – সবুজ

৫.  ১৫-২০% হিন্দু হ্রাস – গাঢ় সবুজ

৬.  ২০%+ হিন্দু হ্রাস – লাল

Religions Demographics of India – Age Based 02

জেলা অনুযায়ী হিন্দু জনসংখ্যার চুড়ান্ত ভাগ।

উপরে দেয়া মানচিত্রে এটা স্পষ্ট যে বহু এলাকাতেই নবীন ও প্রবীনদের হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে। উত্তর পূর্ব এলাকা এবং কাশ্মীরের বেশ কিছু জায়গায় হিন্দু জনসংখ্যা শূণ্য হয়ে গেছে তাই এইসব এলাকায় প্রবীন ও নবীনদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন চোখে পরছেনা।

এই মানচিত্রে ভারতের বিভিন্ন এলাকায় হিন্দু জনসংখ্যার ৬৫-৬৯ বছর এবং ০-৪ বছরের চুড়ান্ত রূপরেখার সাথে সাথে আমরা দেশজুড়ে তাদের পরিবর্তনেরও উল্লেখ করবো।

এই লেখায় ব্যবহৃত সব তথ্যই বিভিন্ন জেলার ২০১১ সালের জনগণণার সময় প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

Religions Demographics of India – Age Based 03

জেলা অনুসারে প্রবীন (৬৫-৬৯) ও নবীন (০-৪) প্রজন্মের হিন্দু জনসংখ্যার পরিবর্তন।

পরবর্তী বক্তব্যে যাওয়ার আগে একটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার যে ,১) গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, উত্তর পূর্ব ঝাড়খন্ড বা ছত্তিশগড়ের কিছু এলাকায় যেটুকু বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে তার মাত্রা খুবই কম। কেবলমাত্র গোয়াতে কিছুমাত্র সদর্থক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে আর সেটাও হয়েছে প্রধানত মহারাষ্ট্র আর কর্ণাটক থেকে হিন্দুদের পুনর্বাসনের জন্যে। তবে একটা কথা বলা যেতেই পারে যে কোন জায়গাতেই প্রবীন ও নবীনদের পরিবর্তন ৫%-এর বেশী নয়।

আরেকটা বিষয় হল যে, পাকিস্তানের সীমা বরাবর, জম্মু ও কাশ্মীরের বাইরে, একমাত্র গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলেই হিন্দু জনসংখ্যা ৫ শতাংশের বেশী হারে কমেছে। কচ্ছের গ্রামাঞ্চলে এই পার্থক্য >১০% যেখানে প্রবীনদের সংখ্যা ৮১.৮৭% থেকে নবীনদের জনসংখ্যা ৭১.০৪%। এই হ্রাসের অনুপাত সীমা সুরক্ষার জন্যে খুবই আশঙ্কাজনক।

উপরের মানচিত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে হিন্দু জনসংখ্যা মূলত সাতটি অঞ্চলে হ্রাস পাচ্ছে –

১. পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, দক্ষিণ উত্তরাখন্ড, মেয়ট এবং শেখায়তি

২. বাংলাদেশ সীমান্ত

৩. মালাবার, কানাড়া এবং কুর্গ

৪. অরুণাচল প্রদেশ

৫. জম্মু

৬. ওড়িশার উপজাতিবহুল এলাকা

৭. মণিপুরের উপত্যকা

এই এলাকাগুলি ছাড়াও মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং মণিপুরের বহির্ভাগে হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় শূণ্য হয়ে গেছে। মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং মণিপুরের বহির্ভাগের বিভিন্ন অঞ্চলে যেটুকু সদর্থক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে সেটা বাস্তবে প্রতীকী যেহেতু সেই জায়গাগুলি বাস্তবে হিন্দু জনসংখ্যা নেই বললেই চলে। নিকোবর দ্বীপের ক্ষেত্রেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। লাদাখ এলাকায় যেটুকু সদর্থক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে সেটা কৃত্তিম, প্রাক্তন সেনাদের (বিএসএফ, আর্মি, আইটিবিপি) বিপুল সংখ্যায় জমায়েত এলাকার মানচিত্রে হিন্দু জনসংখ্যার সদর্থক রূপ প্রকাশ করছে। যদিও আসল ঘটনা হল যে লাদাখে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের (যারা এই অঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যার মূল ধারা) সংখ্যা ক্রমাগত কমছে (৫)।

আমরা এই সবকটি এলাকার গ্রাম ও শহরের পরিবর্তনের কথা এবার বিশদে আলোচনা করবো।

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, দক্ষিণ উত্তরাখন্ড, মেয়ট এবং শেখায়তি

পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ

 উপরের মানচিত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে, উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগর, মেরট, বাগপথ, হাপুর ও গাজিয়াবাদ নিয়ে গঠিত দোয়াবের উত্তরাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। (এই সবকটি জেলাই ২০১১ সালের জনগণণার সময় বর্তমান ছিল। সামলির মত সদ্যগঠিত জেলার ক্ষেত্রে ২০১১ সালে তার পূর্বতন জেলার রেকর্ড দেখতে হবে)। রোহিলখন্ড, মথুরা এবং আলিগড়ের মত জেলাগুলিতে হিন্দু জনসংখ্যা লক্ষ্যণীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।

Religions Demographics of India – Age Based 04

সাহারনপুর, মেরট, মুজাফফরপুর ও বাগপথের শহরাঞ্চলে এবং গাজিয়াবাদ, মেরট, মুজাফফরপুর ও বাগপথের গ্রামাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য পতন ঘটেছে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল যে গাজিয়াবাদ ও বাগপথ এখনও হিন্দুদের গড় হলেও (যথাক্রমে ৭৩.৮৫% এবং ৭১.৭%), এই এলাকায় হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে। রোহিলখন্ড, আলিগড়, বুলন্দশহর এবং হাতরাসের শহরাঞ্চলেও হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে। বাস্তবে, উত্তর দোয়াব এবং রোহিলখন্ডের শহরাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
সাহারনপুর৫৯.৮৪৪০.২৩১৯.৬১৬৯.২০৫৪.৪৫১৪.৭৫
মুজাফফরপুর৬২.২৭          ৪০.৯১২১.২৬৭১.৮৮৫২.২৭১৯.৭১
মেরঠ৭২.৫৪          ৫২.৬৭১৯.৮৭৭৭.১৫৫৯.২৫১৭.
গাজিয়াবাদ৮৪.১৭৭১.২২১২.৯৫৭৬.৩২৫৮.২৬১৮.০৬
বাগপথ৭৬.৩২             ৫৪.৪২২১.৮৩.৬৩.৩৭১৯.৮৩
জ্যোতিবাফুলে নগর৩৬.৯৮৩০.৩৪.৬২   ৭১.৮৬৬৩.১৪.৭২
বিজনোর৩২.১৯২৭.১৯৭০.৮৪৫৮.৮০১২.০৪
রামপুর৩৩.২২          ২৯.১৮           .০৪৫৮.৩১৫৩.০৯.২২
মোরাদাবাদ৫০.২৪          ৪০.১৮১০.০৬৬১.২৬৫২.০৯.১৭
বেরেলী৫৮.৯৩          ৪৮.৪১১০.২৫৭৫.৫৫৭০.২৭.২৮
আলীগড়৬৭.১২           ৫৭.০৬১০.০৬৯১.৬৪৮৬.৪৭.১৭
বুলন্দশহর৬৮.২৯          ৫৫.৪৭১২.৮২৮৬.৮২.

উপরের তালিকা থেকে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট, যেমন –

 . সাহারনপুর, মুজাফফরনগর, মেরট, গাজিয়াবাদ এবং বাগপথ সম্মীলিত উত্তর দোয়াবের শহর ও গ্রাম, উভয় স্থানেই, হিন্দুর সংখ্যা দ্রুত কমছে। সাহারনপুরের গ্রামাঞ্চলে প্রবীন ও নবীনদের পার্থক্য সর্বাধিক ২১% আর সর্বোনিম্ন ১৪.৭৫%। এমতাবস্থায়, এই এলাকাতে হিন্দু জনসংখ্যা শুধু কমছে বললে সেটা সত্যের অপলাপ হবে।

 . রোহিলখন্ডের (জ্যোতিবা ফুলে নগর, বেরেলী, বিজনোর, মোরাদাবাদ এবং রামপুর) শহরাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা হয় ইতিমধ্যেই ভগ্নাংশে পরিণত হয়েছে (জ্যোতিবা ফুলে নগর, বিজনোর, এবং রামপুর) অথবা হতে চলেছে (বেরেলী ও মোরাদাবাদ) যেখানে পার্থক্য ১০ শতাংশের বেশী। এই এলাকার গ্রামাঞ্চলেও হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে, বিজনোরে ১২.০৪%, জ্যোতিবা ফুলে নগর ৮.৭২% এবং মোরাদাবাদে ৯.০৭%। রামপুর গ্রামীন এলাকার জনসংখ্যা ইতিমধ্যেই সর্বোনীম্ন স্তরে (৫৮.২২%) পৌছে গেছে এবং প্রবীন ও নবীনদের পার্থক্য ৫% হারে বাড়ছে। এমনকি বেরেলীর মত স্থান, যেখানে হিন্দুদের অবস্থা সবচেয়ে ভাল, সেখানেও প্রবীন ও নবীনদের মধ্যে পার্থক্যে হিন্দু জনসংখ্যা ৫% করে জমি হারাচ্ছে।

 . আলীগড় ও বুলন্দশহর সম্মীলিত উত্তর দোয়াবের শহরাঞ্চলেও হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুত কমছে। আলিগড়ের ক্ষেত্রে এই হার ১০.০৬% আর বুলন্দশহরের ক্ষেত্রে ১২.৮২%। এই এলাকার গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল যদিও সেখানেও এই প্রবীন ও নবীনদের হার যথাক্রমে ৫.১৭% ও ৪%

 দক্ষিণ উত্তরাখন্ড

Religions Demographics of India – Age Based 05

উপরের মানচিত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে হরিদ্বারের মত এলাকার শহর ও গ্রামাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। শহীদ উধম সিং নগরের মত স্থানেও হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার ঘটনাকে উপেক্ষা করা যায়না। নীচের তালিকাতে আমরা প্রকৃত সংখ্যা ও সম্ভাব্য পরিণতির উল্লেখ করা হয়েছে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
হরিদ্বার৮০.৫৬৬৫.৩৮১৫.১৮৬৮.৭৩৫৪.৭৫১৩.৯৮
নৈনিতাল৮১.৭৯          ৬৫.৫৩১৬.২৬৯৭.৩২৯৪.৮৮.৪৪
উধমসিং নগর৭১.৯৬           ৬২.০৫.৯১৮৬.৯৮৭৮.৮৯.০৯
দেরাদূন৯২.৯৭              ৮৪.১৫.৮২৮৯.৬৩৮২.৪৫.১৮

উপরের তালিকা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে উত্তর দোয়াব ও রোহিলখন্ড সংলগ্ন উত্তরাখন্ডে হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে এবং হরিদ্বারে রীতিমত ভেঙে পরেছে। নৈনিতালের অবস্থাও হরিদ্বারের মত এবং দেরাদূনের শহরাঞ্চলেও অবস্থা কিছুমাত্র ভাল নয়। রামপুর ও উধম সিং নগরে কিছু মাত্রায় শিখ রয়েছে। এদের সংখ্যা রামপুরে ৩% এবং উধম সিং নগরে ৫১০%। উত্তর দোয়াব ও রোহিলখন্ডের মুসলিম বেল্ট উত্তরদিকে এগোতে এগোতে কুমায়ুন ও গাড়োয়ালের শহরাঞ্চলকেও ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছে।

মেয়ঠ এবং শেখায়তি

Religions Demographics of India – Age Based 06

Religions Demographics of India – Age Based 07

মেয়ঠ ও শেখায়তির ভৌগলিক অবস্থান পাশাপাশি হলেও মুসলিম জনসংখ্যার ক্ষেত্রে এদের সাদৃশ্য প্রায় নেই বললেই চলে। মেয়ঠ অঞ্চলের  (মেয়ঠ, হরিয়ানার ফরিদাবাদ জেলা এবং রাজস্থানের ভরতপুর ও আলওয়ার জেলা) গ্রামগুলিতে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে যেহেতু অধিকাংশ মেও মুসলিম গ্রামের অধিবাসী। যদিও, সত্যি কথা বলতে গেলে, ফরিদাবাদ, আলওয়ার ও ভরতপুরের মাত্র কিছু অংশই মেয়ঠের সাথে সাংস্কৃতিকভাবে যুক্ত কিন্তু যেহেতু আমাদের কাছে বয়সের উপজেলাভিত্তিক জনসংখ্যার তথ্য নেই তাই আমরা ফরিদাবাদ, আলওয়ার ও ভরতপুরকে মেয়ঠ অঞ্চলের সাথে যোগ করেছি। অন্যদিকে, শেখায়তি এলাকার মুসলিম জনসংখ্যার একটা বড় অংশ সেই অঞ্চলে অধিষ্ঠিত শহুরে ব্যবসায়ী ও অন্যান্য শিল্পীদের দ্বারা গঠিত। যেহেতু এলাকা দুটি পাশাপাশি অবস্থিত তাই আমরা তাদের একই অংশে অন্তর্ভুক্ত করেছি।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
মেয়ঠ৬৪.৯৪৪৫.০৬১৯.৮৬২০.৪৩১১.১৯৯.২৪
ফরিদাবাদ৯৪.৬৮          ৮৯.০২.৬২৮৮.৩৬৭৮.৩৪১০.০৮
আলওয়ার৯৬.৭৫          ৯১     .৭৫৮৮.৯৩৭৫.১০১৩.৮৩
ভরতপুর৯৭.৩৮          ৯৫.২৭.১১৮৭.৪২৭৪.৯৬১২.৪৬
চুড়ু৭৪.১৯                 ৬১.৮১১২.৩৮৯৬.২৭৯৪.৫৬.৭১
ঝুনঝুনু৭৯.০২           ৬৪.৯৭১৪.২৫৯৫.৯২.৫২.০৮
সিকার৭২.৬৬           ৫৮.০২১৪.৬৪৯৫.৭১৯৩.৩৪.৩৮

মেয়ঠের গ্রামাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় মুছে গেছে। শহরাঞ্চলেও হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে যা প্রমান করে যে শহরের হিন্দুরা গ্রামাঞ্চলের মেও মুসলমানদের চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে। মেয়ঠের অন্য তিনটি জেলায়, হিন্দু জনসংখ্যার পতন মুলত গ্রামীণ, যা বোঝায় যে হিন্দুরা গ্রামীণ ফরিদাবাদ (বর্তমান পলয়াল জেলা সমেত), আলওয়ার ও ভরতপুর এলাকাতে খুব দ্রুত জমি হারাচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এই জেলাগুলিতে, পূর্ববর্তী প্রজন্মে হিন্দু জনসংখ্যা ৮৫%-র বেশী ছিল। আর তাই এই পতন বেশ উল্লেখযোগ্য এবং এই এলাকার হিন্দুদের জন্যে অশুভ ইঙ্গিতবাহী।

 অন্যদিকে, শেখায়তি অঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যার পতন প্রধানত শহরকেন্দ্রিক। গ্রামীণ এলাকায় হিন্দুরা প্রধানত ৯০ শতাংশের বেশী এবং কোথাও ৪%-এর বেশী অনুপাতে কমছেনা। যদিও শেখায়তির তিনটি জেলার গ্রামাঞ্চলে হিন্দুদের পতনের হার ১২% থেকে ১৫%-এর মধ্যে। এটা যথেষ্ট চিন্তার বিষয়।

বাংলাদেশ সীমান্ত

বিহার

Religions Demographics of India – Age Based 08

বিহারের প্রধানত উত্তর পূর্ব কোনে জনসংখ্যার ভারসাম্যগত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। এই সমস্যা ধীরে ধীরে মিথিলার, নেপাল সংলগ্ন, অঞ্চলেও ছড়িয়ে পরছে কিন্তু আপাতত সর্বাধিক প্রভাবিত এলাকা হল উত্তর পূর্ব বিহারের (সীমাঞ্চল) কিষনগঞ্জ, আড়া, পূর্ণিয়া এবং কাটিহার জেলা। জেলাগুলির শহর ও গ্রাম, উভয়ের জনসংখ্যাই ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। নীচের তালিকা দেখলে পরিবর্তন বোঝা যাবে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
কিষণগঞ্জ৬১.৫১৪৮.৩৯১২.১২ ৩৩২৮.০১৪.৯৯
আড়া৬৬.৪৭          ৫৩.৯১১২.৫৬৬৩.৫৬৫১.৬৪১১.৯২
পূর্ণিয়া৮১.৩            ৭১.৪২.৮৮৬৩.৫৬.১১.৩৯
কাটিহার৮০.২৯                 ৭২.৩৭.৯২৫৯.২২৪৯.৩৬.৮৬

উপরের মানচিত্র আর তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট যে কিষণগঞ্জের গ্রামীণ এলাকায় হিন্দু জনসংখ্যা প্রায় মুছে গেছে এবং শহরাঞ্চলে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে। আড়া, পূর্ণিয়া আর কাটিহারের গ্রামাঞ্চল ও শহরাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা বেশ ভাল মাত্রায় হ্রাস পেলেও শহরাঞ্চলে এখনও তারাই সংখ্যাধিক। এটা বাংলাদেশ সংলগ্ন সবকটি যায়গার চরিত্রগত বৈশিষ্ট যেহেতু অধিকাংশ বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী গ্রামাঞ্চলে বসতি স্থাপন করতে পছন্দ করে যাতে সেই এলাকার সরকারি ও খালি জমিতে মৌরুসিপাট্টা বসাতে পারে।

ঝাড়খণ্ড

Religions Demographics of India – Age Based 09

বিহারের সীমাঞ্চলের মত ঝাড়খন্ডের সাঁওতাল পরগণারও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে। বিপুল সংখ্যায় অবৈধ বাংলাদেশীদের আগমনের ফলে সীমাঞ্চল ও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শীদাবাদবীরভূম সন্নিহিত এলাকাগুলির খাস জমি আজ বেদখল হয়ে গেছে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
সাহেবগঞ্জ৭৪.৫৪             ৬০.৬৫১৩.৮৯৬১.০১৫১.৬৪.৩৭
পাকুর৫৫.৫৯          ৩৪.৭৮২০.৮১৫৭.০৩৫২.৭৩.
দেওঘর ৮৮.৯১৮৪.০৬.৯৫          ৮৩৭৩.০৪.৯৬
গোড্ডা৮৪.০৮          ৭২.৯৮১১.৭৮.৯৭৭০.৩২.৬৫
জামতাড়া৮৮.৬৭          ৮৩.১৯.৪৮৮৩.১৮৭১.০৮১২.

উপরের তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট যে সাহেবগঞ্জ, পাকুর এবং গোড্ডার শহরের জনসংখ্যা এবং সাহেবগঞ্জ, দেওঘর ও জামতাড়ার গ্রামীন জনসংখ্যা চরম অবনতি ঘটছে। আমাদের ধারণা যে এটা বিভিন্ন জেলায় শিল্পায়নের প্রভাব। পাকুরের গ্রামাঞ্চলে কৃষিকাজ বেশী তাই সেখানে অবৈধ বাংলাদেশীদের দ্বারা জমি দখল করার সম্ভাবনা কম। জামতাড়া, দেওঘর বা গোড্ডার মত এলাকা, যেখানে কৃষিকাজ তুলনামূলক কম আর খালি জমির পরিমান বেশী, সেখানে বাংলাদেশীরা সহজেই কব্জা জমাচ্ছে। গোড্ডা, পাকুর ও সাহেবগঞ্জে গড়ে ওঠা শিল্পগুলিতে, কমদামি শ্রমিকের যোগান দিচ্ছে অবৈধ বাংলাদেশীরা।

পশ্চিমবঙ্গ

ভারত ও বাংলাদেশ সীমান্তের অনেকটা অংশই পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত আর পশ্চিমবঙ্গে মূল বাসিন্দাদের স্বার্থরক্ষা করার, মেঘালয় ও মিজোরামের মত, কোন আইন না থাকার ফলে এই রাজ্য অবৈধ বাংলাদেশীদের মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। আমরা এর পরিণতি পর্যালোচনা করবো।

উপরের মানচিত্রটি এক ঝলক দেখলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলিতে হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে। এর সাথে যদি শহরাঞ্চলের হিন্দুদের কর্মসূত্রে অন্যরাজ্যে চলে যাওয়ার প্রবণতা যোগ করা তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে। নীচের তালিকায় আমরা জেলাগুলির পরিবর্তনের ছবি তুলে ধরছি।

Religions Demographics of India – Age Based 10

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
কুচবিহার৯১.৭৫৮৩.৭৩৮.০২৭৬.২১৬৮.১০৮.১১
উত্তর দিনাজপুর৯১.৯০          ৮১.৪৯১০.৪১৪৯.২৩৩৬.৮৬১২.৩৭
দক্ষিণ দিনাজপুর৯৮.৯৭.৭৫.৭৫৭৩.১৯৬৫..২৯
মালদা৭৩.১৬          ৫৭.২২১৫.৯৪৫০.০৯৪০.২৭.৮২
মুর্শিদাবাদ৫৯.২৩           ২৯.১১৩০.১২৩৫.৯৪২৫.০৪১০.
নদীয়া৯৪.৭১ ৮৯.৮১.    ৭০.০২৫৭.২৬১২.৭৬
বীরভূম৮২.১২               ৬৪.৫৯১৭.৫৩৬৬.২৩৫৫.৬১১০.৬২
বর্ধমান       ৮৯.৭৭          ৮০.৪২.৩৫৭৮.২৭৭১.৯৪.৩৩
হুগলী৯১.১৮          ৮১.৩৩.৮৫৮৫.৩১৭৮.৮৮.৪৩
হাওড়া৮২.৪৮৬১.৯৯২০.৪৯৮২.৫৪৬৬.৯৩১৫.৬১
কলকাতা৮৭.৭৭৬৮.০৪১৯.৭৩
উঃ ২৪ পরগণা৯৩.           ৮২.৫১.৬৯৬৩.৪৫৪৬.৮৯১৬.৫৬
দঃ ২৪ পরগণা৭৭.৭৭               ৫২.৩৫২৫.৪২৭২.০৩৫২.২৬১৯.৭৭

উপরের তালিকা থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে সাতটি জেলায় হিন্দুদের সংখ্যা কমার পরিমাণ রীতিমত ভয়াবহ। দুই পরগণার অবস্থা সবচেয়ে মারাত্মক, বিশেষত দক্ষিণ ২৪ পরগণার অবস্থা খুবই শোচনীয় যেহেতু সেখানে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা সর্বাধিক। হাওড়ার অবস্থাও তথৈবচ। এই জেলার গ্রাম ও শহর, উভয় স্থানেই হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। এই তিনটি জেলা ছাড়াও, উত্তর দিনাজপুর, মালদা ও মুর্শিদাবাদ জেলাতেও হিন্দু জনসংখ্যা পতনের হার উদ্বেগজনক। কর্মসুত্রে হিন্দুদের স্থানত্যাগ এবং অবৈধ বাংলাদেশীদের শরণার্থী হিসাবে আগমন এই জেলাগুলির জনসংখ্যার বিপুল তারতম্য ঘটিয়েছে। বাকি জেলাগুলিতে হিন্দু জনসংখ্যার পতনের হার আশঙ্কাজনক হলেও, ভয়াবহ নয়।

 এছাড়াও, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিন ২৪ পরগণা, হাওড়া, উত্তর দিনাজপুর ও মুর্শিদাবাদ জেলার গ্রাম ও শহর, উভয় ক্ষেত্রে, উত্তর ২৪ পরগণা ও নদীয়া জেলার গ্রামীণ অঞ্চলে এবং মালদা জেলার শহরাঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত কমছে। এলাকাথেকে প্রাপ্ত খবরানুসারে, দুই ২৪ পরগণা, হাওড়া ও নদীয়া অবৈধ বাংলাদেশীদের গড়ে পরিণত হয়েছে।

আসাম

Religions Demographics of India – Age Based 11

উপরে দেয়া মানচিত্রে একটু নজর দিলে বোঝা যাবে যে আসামের গ্রাম এবং শহর, দুই যায়গাতেই হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং সেহেতু অবৈধ বাংলাদেশীরা গ্রামীণ এলাকায় বসতি স্থাপনে বেশী আগ্রহী, তাই গ্রামাঞ্চলে জনসংখ্যা হ্রাসের হার শহর থেকে বেশী। কেবলমাত্র ডিমা হাসাও এলাকার, যেখানে জমির মালিকানা সংক্রান্ত আলাদা আইন রয়েছে, শহরাঞ্চলে কিছুটা সদর্থক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
ধুবরি৬৮.৯৮৪৫.৩৯২৩.৫৯২৩.২৬          ৯.৭৫১৩.৫১
কোকরাঝাড়৯২.৭৪          ৮৪.১৮.৫৬   ৬৫.৭৬৫০.০৮১৫.৬৮
গোয়ালপাড়া৫২.৭১          ২৯.৪৩২৩.২৮             ৪৫২২.৮৫২২.১৫
বারপেটা৮৯.৩১৭৪.৪৭১৪.৮৪৩৭.০৩১৪.১৭২২.৮৬
বঙ্গাইগাও৯১.১৭          ৭৫.৮২১৫.৬৫৫৭.৫২২৮.৮৬২৮.৬৬
কামরূপ৮৪.৬            ৭৪.৩১১০.২৯৬৫.০৮৪২.৪১২২.৬৭
নলবাড়ি৮৯.৫৮৮২.৬৩.৯৫৬৫.০৮৪৭.০৬২৫.৩২
চিড়াং৮২.৭৭            ৬৩.২৯২৪.৫৮৭৩.৫৯.১৩১৪.১৭
বাকসা৮০.৪৪            ৬২.৩৫১৮.০৯৮৭.৬৭৭৬.৯২১০.৭৫
দাড়াং৮৩.০৪           ৭৮.৪২.৬২৪৭.২৮১৯.৭৪২৭.৫৬
নগাঁও৮২.৯৪          ৬২.২৫২০.৬৯৫১.২৪২৮.০৫           ২৩.১৯
মোড়িগাও৭৬.০৯          ৫৯.৯৬১৬.১৩৫৫.২৭          ৩৪২১.২৭
সতিপুর৯০.           ৮০.৮৫.৯৫৭৯.২১৬৫.৬৮১৩.৫৩
করিমগঞ্জ৮১               ৫৩.৪১২৭.৫৯৫২.২৪৩০.২৬২১.৯৮
হাইলাকান্দি৮৪.৯৫          ৬০.৬৮২৪.২৭৪২.৩০.১২.
কাছাড়৮৪.৫২          ৭০.৬৯১৩.৮৩৬২.৭৮৫০.২১১২.৫৭
লখিমপুর৮১.২৫          ৬৭.২৭১৩.৯৮৮৪.৭৪৭০.১৬১৪.৫৮

উপরের তালিকায় চোখ বুলালে বোঝা যাবে যে বোড়ো অধ্যুষিত কোকরাঝাড়, বাকসা ও চিড়াং জেলা সমেত, সমগ্র দক্ষিণ আসামে হিন্দু জনসংখ্যার ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। বরাক উপত্যকার জন্যেও একই কথা প্রযোজ্য। বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ, যে আগে প্রধানত গ্রামীণ এলাকার সমস্যা ছিল, এখন শহরেও প্রবেশ করে গ্রাম ও শহর, দুই যায়গাতেই হিন্দু জনসংখ্যাকে বিপন্ন করে তুলছে। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে, উত্তর আসামের লখিমপুর ও সতিপুরের মত স্থানেও হিন্দু জনসংখ্যা বিপদের সম্মুখীন। এটা প্রমাণ করছে যে উত্তর আসামও বিপদসীমায় অবস্থান করছে।

ত্রিপুরা

Religions Demographics of India – Age Based 12

উপরের মানচিত্র থেকে এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ত্রিপুরার জেলাগুলিতে, বিশেষত গ্রামাঞ্চলে, হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। বিহার থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত বিস্তৃত এই বাংলাদেশ সীমান্ত।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
উত্তর৯৬.৬১৯০.৬৯৬.২২৮০.৯২৭০.৮৬১০.০৬
দক্ষিণ৮৮৮১.০২.৯৮   ৯৭.০৩৯১.৯৫.০৮

 আসাম সংলগ্ন উত্তর ত্রিপুরাতে জনসংখ্যার পতন আশঙ্কাজনক। আসামের তুলনায় এই পতন কম উদ্বেগজনক হলেও, ভবিষ্যতে উদ্বেগজনক হয়ে ওঠার পরিপূর্ন সম্ভাবনা আছে।

জম্মু

Religions Demographics of India – Age Based 13

জম্মুর পার্বত্য ও সমতল, উভয় এলাকাতেই যে হিন্দু জনসংখ্যা কমছে সেটা উপরের মানচিত্র দেখলেই বোঝা যাবে। পার্বত্য এলাকার রাজৌরি অঞ্চলের গ্রাম ও শহর, উভয় স্থানেই জনসংখ্যা কমছে আর সমতল এলাকার কিসতওয়ার ও ডোডা অঞ্চলের, মূলত গ্রামাঞ্চলে, হিন্দু জনসংখ্যার পতন ঘটছে। জম্মুতে ৫১০% শিখ।  উধমপুর কিছুটা স্থিতাবস্থা বজায় রেখেছে। নীচের তালিকায় পার্থক্যটা দেখতে পারা যাবে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
জম্মু৯৫.১৪৮৮.৪৪ ৬.৭৯৪.৯৩৮৯.২৬৫.৬৭
কাঠুয়া          ৯৬.৪৩          ৯৩.৭০.৭৩   ৯১.০২৮৪.৭৪.২৮
রাজৌরি৬৬.৬৭          ৪৯.৩৫১৭.৩২৩৬.৫৮২৬.৮৬.৭২
রেসি৮৯.৬৭          ৮২.২১.৪৬   ৫০.৭৬৩৮.৭৯১১.৯৭
রামবন৪২.৭১          ৩৫.৭৮.৯৩২৬.৪৩২৫.০৪.৩৯
ডোডা২৬.৭৮          ২৬.৭৫.০৩   ৪৯.৮৭৪২.৩৮.৪৯
কিসতওয়ার২৫.২৩.২৯.৩১৪৮.৪৩৩৫.৮১১২.৬২

রাজৌরিতে হিন্দু জনসংখ্যার কম উপস্থিতি সত্ত্বেও তাদের দ্রুত পতন যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। জম্মু ও কাঠুয়ার গ্রামাঞ্চলে, একসময় বিপুল উপস্থিতি সত্ত্বেও, হিন্দু জনসংখ্যার পতন গভীর উদ্বেগের বিষয়। উপরের তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট যে কিসতওয়ার ও ডোডার গ্রামীন এলাকাতেও হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুতহারে কমছে।

 এই প্রসঙ্গে লাদাখ ও কাশ্মীর উপত্যকার কথাও উল্লেখ করা দরকার। যেহেতু লাদাখে প্রচুর সংখ্যায় প্রাক্তন সৈন্যরা (সামরিক ও আধাসামরিক) বসবাস করেন তাই এলাকার প্রকৃত হিন্দু জনসংখ্যা পতনের হিসাব করা কঠিন। যদিও বৌদ্ধদের ক্রমহ্রাসমান সংখ্যা প্রমাণ করে যে এই এলাকার জন্মবৃদ্ধির হার খুবই কম এবং পরিস্থিতিও খুবই খারাপ। কাশ্মীর উপত্যকা থেকে হিন্দুরা প্রায় বিলীন হয়ে গেছে, তাই পতনের হিসাব করা মূল্যহীন।

মলাবার, কুর্গ এবং কন্নড়া

ইদানিংকালে হিন্দু জনসংখ্যা দ্রুত পতন যেসব স্থানে ঘটেছে এই এলাকাটি তার অন্যতম। কর্মসূত্রে হিন্দুদের এলাকা ত্যাগ, হিন্দুদের মধ্যে কম জন্মবৃদ্ধির হার এবং মুসলমানদের মধ্যে বিপুল জন্মবৃদ্ধির হার এই এলাকার হিন্দু জনসংখ্যা সর্বকালীন নীচে নামিয়ে দিয়েছে।

Religions Demographics of India – Age Based 14

মলাবার

মানচিত্র দেখলে বোঝা যাবে যে হিন্দু জনসংখ্যার কি ভয়াবহ পতন ঘটেছে। এই অঞ্চলের শুধু পালাক্কাড় জেলা ছাড়া সব যায়গাতেই হিন্দু জনসংখ্যা ৬০%-এর কম এবং মাল্লাপুরম ও ওয়ানাড় জেলাতে তারা ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘূ। নীচের তালিকায় পরিবর্তনটা পর্যালোচনা করা হয়েছে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
কাসরগোড৬১.৬৫৩৭.৮০২৩.৮৫৬৬.১৬৪৯.২১১৬.৯৫
কণ্ণূর৭৩.৫১          ৫০.৪৯২৩.০২৫৫.৬৭৪৫.১৫১০.৫২
বয়নাড৫৫.২২          ৪২.১২.৩২৫২.৫২৪৫.৬৯.৮৩
কোলিকোড৬৯.২৯          ৪৭.৩৭২১.৯২৫৫.০৭৩৭.০৬১৮.০১
মাল্লাপুরম৩৩.৭৮১৯.৬৭১৪.২১৩৩.০৯২০.৮৫১২.২৪
পালক্কাড৭৫.৬৫          ৫৩.৯৪১৯.৭১৭৪.৭৩৫৭.১৭.২৩
ত্রিসুর         ৬০.২৮৫১.৬৪.৬৪৬২.৫৪.৬৯.২১

শিক্ষার প্রসারের ফলে জন্মহার হ্রাস, আর্থিক অনগ্রসরতা ও সাস্কৃতিক কারণে পরিযায়ী মনোবৃত্তি, বিশেষত উত্তরের জেলাগুলিতে, এবং বিপুল সংখ্যার মুসলিমদের অত্যাধিক জন্মহার – এসবেরই পরিণতিতে মালাবার অঞ্চলে হিন্দু জনসংখ্যা বিপর্যয়ের মুখে। শহর ও গ্রাম, দুই যায়গাতেই এই বিপর্যয় ঘটছে তবে শহরে এই হার বেশী। মাল্লাপুরম, পাল্লাকাড়, কোজিকোড়ে, কান্নুর এবং কাসাড়াগোড় এলাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং ত্রিসুর ও ওয়ানাড় এলাকার পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

কন্নড়া ও কুর্গ

একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে কর্ণাটকের কুর্গ ও দক্ষিন কানাড়ার জেলাগুলিতে যেটার ভৌগলিক অবস্থান মালাবার এলাকার ঠিক বিপরীতে। হিন্দু জনসংখ্যার জন্মহার হ্রাস, আর্থিক অনগ্রসরতা ও সাস্কৃতিক কারণে পরিযায়ী মনোবৃত্তি, মুসলিম অনুপ্রবেশ এবং বিপুল সংখ্যার মুসলিমদের অত্যাধিক জন্মহারের ফলে এই এলাকার হিন্দুদের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।

Religions Demographics of India – Age Based 14

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
কুর্গ৭৫.৯৮৬৪.১০১১.৮৮৮৭.২৮৭৭.৫২৯.৭৫
দক্ষিণ কন্নড৬৯.১৭          ৫৩.১৩১৬.০৪৭৮.৭২৬৪.৬১১৪.১১

মণিপুর উপত্যকা

Religions Demographics of India – Age Based 16

মণিপুরের ক্ষেত্রে হিন্দু জনসংখ্যা পতনের এক অন্য ধারা লক্ষ্য যায়। মণিপুরের বহির্ভাগ, অর্থনীতিতে ভূমিকা নগন্য, প্রায় সম্পূর্ন খ্রীষ্টানবহুল। অর্থনীতির মুল চালিকাশক্তি হল মণিপুরের মধ্যভাগ যেখানে হিন্দু, যাদের মধ্যে সবাই সনামাহি, মিথিসরা নির্ণায়ক শক্তি।  এর ফলে খ্রীষ্টান শ্রমিকরা বহুল পরিমানে মধ্যভাগে প্রবেশ করে হিন্দু জনসংখ্যাকে বিপন্ন করে তুলেছে। যথাযথ হিসাব নীচের তালিকাতে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
বিষ্ণুপুর৯৩.০৫৮২.৮৯১১.০৬৯৫.৫৮৮৭.৬৬৭.৯২
থৌবল৮৫.৯৯৭১.৪০১৪.৫৯৮১.১১৬৫.৯৪১৫.১৭
ইম্ফল পূর্ব৮৪.৯৭          ৭৬.১২.৮৫৮১.৪৪৬৯.৮৯১১.৫৫
ইম্ফল পশ্চিম          ৯৪.১০৮৬.৬৮.৪২    ৯৫.৪৮৯১.৪৯.৯৯

অরুণাচল প্রদেশ

অরুণাচল প্রদেশে আমরা আবার এক অন্য ধরণের পরিবর্তন দেখতে পারি। এখানে ধর্মান্তরের জন্যে প্রধানত শ্রমের উপযোগী কমবয়সীদের চিহ্নিত করা হয়। প্রবীন প্রজন্ম মূলত ধর্মান্তরিত হয়না এবং তাদের মৃত্যুর সাথেই তাদের ভূমিকা শেষ হয়ে যায়। এই প্রথা প্রথম নাগাল্যান্ডে দেখতে পাওয়া যায় যেখানে ধর্মান্তরে অনিচ্ছুক প্রবীন প্রজন্মর বিলুপ্তির সাথে সাথে নবীন প্রজন্মের খ্রীশটানরাই অবশিষ্ট থাকে। অরুণাচল প্রদেশের পশ্চিম ভাগে এই ধারাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই রাজ্যে মূল পরিবর্তন ঘটেছে রাজধানী ইটানগর ও তার আশেপাশের জেলাগুলিতে অথবা সুদূর পূর্ব অংশে, যেখানে হিন্দু জনসংখ্যা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই রাজ্যের হিন্দু জনসংখ্যার হিসাবে ১১% বৌদ্ধ, ৩০% হিন্দু এবং ২৫% ডন্যি পোলো সহ অন্যান্য উপজাতিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Religions Demographics of India – Age Based 17

পরিবর্তনের প্রকৃত রূপ নীচের তালিকা দেখলে স্পষ্ট হবে।

জেলা  শহরগ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত৬৫-৬৯০-৪ তফাত
পশ্চিম কামিং৯৭.০৩৮৫.১২১১.৯১৮৯.৫৭৮৫.০৯৪.৪৮
পূর্ব কামিং৫৫.১৭৫১.৭৫           .৪২   ৫৩.৪২          ৪৮.১৩.২৯
পাপুম পাড়ে৬৫.৬৫৫৬.৪২.২৩   ২৪.৭১২৪.৬১.
কুরুং কিমি৪৮.৮৩          ৩৮.৯৮.৮৫
নীম্ন সুবনসিড়ি৬৩.৫৩          ৬৩.১৩.     ৬৪.৬৩৪৫.১৯.২৩
পশ্চিম সিয়াং৮৪.৯৫                ৭৫.৭০.২৫  ৭৩.৫৪৬৬.৭১.৮৩

 ওড়িশার উপজাতিবহুল দক্ষিণাঞ্চল

Religions Demographics of India – Age Based 18

গ্রামীণ

উপরে বর্ণিত হিন্দু জনসংখ্যা পতনের ধারা ওড়িশার দক্ষিণাঞ্চলে উপজাতিবহুল এলাকাতেও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নীচের তালিকায় দক্ষিণ ওড়িশার গ্রামীণ এলাকার পরিস্থিতি দেখানো হয়েছে।

গ্রাম
৬৫-৬৯০-৪ তফাত
কান্ধামাল৮১.৮৫৭৩.৮২৮.০৩
গজপতি৬৩.৭৪৫৩.৮৪.

  প্রধান শহর

শেষ অধ্যায়ে আমরা প্রধান শহরগুলির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবো। আমরা ৫০ টা প্রধান শহরকে বেছে নিয়েছি। এদের সবারই দ্রুত অগ্রগতি ঘটছে এবং এই শহরগুলিতে জনস্রোত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলত, আমরা এখানে প্রবীন ও নবীনদের তলনামূলক আলোচনার বদলে ১৯৯১ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যার পরিবর্তন এবং তার সাথে মোট জনসংখ্যায় নবীনদের (৪ বছর) অংশীদারিত্ব নিয়ে পর্যালোচনা করবো। ছোট শহর ও শহরতলীর ক্রমহাসমান হিন্দু জনসংখ্যার জন্যে অনেকে সেখান থেকে হিন্দুদের বড় শহরে চলে যাওয়াকে কারণ বলে দাবী করে থাকেন। এই দাবী কতটা সঠিক সেটা আমরা এই প্রবন্ধে আলোচনা করবো। তরুণ হিন্দুরা যদি সত্যিই বিপুল সংখ্যায় মেট্রো শহরগুলিতে চলে গিয়ে থাকে তাহলে সেই মেট্রো শহরে হিন্দুদের নবীন প্রজন্মের, বিশেষত কর্মক্ষম এবং শিশুদের, সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া উচিত কারণ তরুণদেরই সন্তানধারনের সম্ভাবনা বেশী।

 আমরা পঞ্চাশটা বড় শহরকে বেছে নিয়েছি যাদের জনসংখ্যা ১০ লক্ষের বেশী বা কাছাকাছি। এদের মধ্যে ১২ টা শহরে, আমরা দেখেছি যে, হিন্দুদের (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন এবং শিখ) অনুপাত আশি শতাংশের নীচে। এই ১২টা শহর হল মুম্বাই (কর্পোরেশন এলাকা), হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, লক্ষ্ণৌ, থানে, ভোপাল, মীরাট, বেনারস, ঔরঙ্গাবাদ, শ্রীনগর, এলাহাবাদ, রাঁচি এবং তিরুবনন্তাপূরম। এই ১২টা শহরে আমরা হিন্দু জনসংখ্যার পরিবর্তন পর্যালোচনা করেছি। যে ২০টি শহরে শরণার্থীরা গেছে বলা হয় সেগুলির উপর আমরা চোখ বুলিয়ে নেবো।

শহর১৯৯১ ভাঃ জঃ২০০১ ভাঃ জঃ২০১১ ভাঃ জঃ-৪ভাঃজঃ ২০১১
মুম্বাই৭৮.৭৩৭৭.৬৮৭৫.৮৩৬৯.৭৯
হায়দ্রাবাদ৫৮.৩২৫৬.১৮৫২.৭৫৪৬.৪৫
কলকাতা৮১.৭৮.৫৭৭৭.৪২৬৮.০৪
লক্ষ্ণৌ৭৫.০০                   ৭৩.৮১৭২.৮৪৬৮.৫৬
ভোপাল৭০.৭৭                   ৭২.৩০৭২.২২৭০.০১
মেরঠ৬৫.৪২                  ৬৩.৪৪৬৩.৮৮৫৪.৬৮
বেনারস৭১.০১                   ৬৮.৫৮৭০.৪৯৬৬.১৬
শ্রীনগর১১.৫৬                 .৩৪.৮২.৪৩
ঔরঙ্গাবাদ৬৯.৭৩৬৯.৯৫৬৮.০৯৬৩.৮৭
এলাহাবাদ৭৭.৬৯                   ৭৮.৯৭৭৬.৭৮৭৩.৭৭
রাঁচি৭৪.৮৯                   ৭৪.২৯৭৪.৭১৭৩.৪২
তিরুবনন্তপূরম৭২.৪৫                   ৭১.১৭৬৮.৬২.৫৩

 ) ১৯৯১ সালে কোন জনগণনা না হওয়ার কারণে শ্রীনগরের ক্ষেত্রে ১৯৮১ সালের হিসাব নেয়া হয়েছে।

) বাদামীবাগকে এই হিসাবের মধ্যে নেয়া হয়েছে যদিও এবারের জনগণনায় বাদামীবাগকে আলাদা করে ধরা হয়েছে।

) এই সংখ্যা শ্রীনগরে বসবাসকারী প্রকৃত হিন্দু জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে হিসাব করা হয়েছে। যেহেতু জনগণনায় এই তথ্য পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়নি তাই আমাদের কাছে প্রকৃত তথ্য পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

বিপুল জনস্রোতের কারণে এই শহরগুলির জনসংখ্যা কখনই স্থায়ী রূপ নেয়না এবং প্রতি জনগণনাতেই বদলাতে থাকে। তবুও, ভোপাল বাদ দিয়ে বাকি শহরগুলির ক্ষেত্রে একটা মৌলিক ধারা হল যে ১৯৯১ সালের প্রেক্ষিতে হিন্দু জনসংখ্যার হ্রাস। প্রধান শহরগুলিতে হিন্দুরা প্রচুর মাত্রায় প্রবেশ করলেও সেখানকার হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমাগত কমেই যাচ্ছে। এটা স্পষ্ট যে প্রধান শহরগুলিতেও, বিশেষত যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যালঘূ জনসংখ্যা ছিল, হিন্দুরা ধীরে ধীরে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। এছাড়া এটাও স্পষ্ট যে কর্মক্ষম হিন্দু জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এই শহরগুলিতে প্রবেশ করলেও তাদের নতুন প্রজন্ম, ৪ বছর, জনসংখ্যার অনুপাতে পিছিয়ে পরছে। মুম্বাই মেট্রোপলিটন এলাকার তথ্যে কিছু ভ্রান্তি রয়েছে। মুম্বাই শহরাঞ্চল প্রধানত দুটি জেলা দ্বারা গঠিত – মুম্বাই ও মুম্বাই শহরতলী। মুম্বাই জেলায় হিন্দু জনসংখ্যা ৭১.৯২ শতাংশে নেমে এসেছে যেখানে ০৪ বয়সের অনুপাত ৬৫.১১% আর তাদের মধ্যে মাত্র ৫৫.৫৯ শতাংশ হিন্দু। দ্বিতীয় আশঙ্কাজনক তথ্য হল যে বাকি ৯.৫২ শতাংশ হিন্দুর মধ্যে ৪.২৭% হল বৌদ্ধ যাদের মধ্যে অনেকেই খ্রীষ্টান হয়ে যায় কিন্তু কাগজেকলমে বৌদ্ধ থাকে। ফলে এই আশঙ্কা থেকে যায় যে মুম্বাইয়ের মোট ৩০ লাখ জনসংখ্যার (কলকাতার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ) মধ্যে মাত্র ৬০% হিন্দু রয়ে যেতে পারে যেহেতু হিন্দু জনসংখ্যা প্রতি দশকেই ২% হারে কমছে। কলকাতাতেও মোট জনসংখ্যার প্রেক্ষিতে নতুন প্রজন্মের (৪ বছর) অনুপাত সমানে কমছে, যা ইতিমধ্যেই ৯.% কম, এবং এটার মূল কারণ হল শহরে বসবাসকারী অবৈধ মুসলিমদের উচ্চ জন্মহার। মীরাটের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ এবং আগামী জনগনণায় এখানকার নতুন প্রজন্মের অনুপাত ৫০ শতাংশের নীচে নেমে যাবে।

 সহায়িকা – এই প্রবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ২০১১ সালের জনগণনা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রদান শহরের তালিকায় ২০০১ সালের তথ্য ২০০১ সালের জনগণনা থেকে নেয়া হয়েছে। ১৯৯১ সালের জনগণনার তথ্য এ.পি.যোশী, এম.ডি.শ্রীনিবাস ও জে.কে.বাজাজের রিলিজিয়াস ডেমোগ্রাফি অফ ইন্ডিয়া থেকে নেয়া হয়েছে।

Featured Image: dailymail.co.uk

Disclaimer: The facts and opinions expressed within this article are the personal opinions of the author. IndiaFacts does not assume any responsibility or liability for the accuracy, completeness,suitability,or validity of any information in this article.